ভোলা কাকার রহস্যভেদ Bhola Kakar mystery



ভোলা কাকার রহস্যভেদ


আচ্ছা বরফ নিয়েই একটা রহস্য গল্প বলি শোনো। দেখি তোমরা রহস্য ভেদ করতে পারো কি না।’

শীতটা প্রচন্ড বেড়েছে। ভোলা কাকা গায়ের চাদরটা ভালোভাবে জড়িয়ে নিতে বললেন, ‘ঠান্ডা একটু বেশি লাগছে মনে হয়! সব জানালা দরজা বন্ধ আছে তো?’


‘তোমার কাকার গরমও যেমন বেশি লাগে আবার ঠান্ডাও তেমন বেশি লাগে,’ বলল তানজিব। স্কুল ছুটি। তাই এখন গল্পের বই পড়ে ও গল্প করে সময় কাটাচ্ছে ও।


তানজিব হঠাৎ বলে উঠলো ‘বরফের দেশে গেলে তুমি কী করতে কাকা,’ ঠাট্টা করলাম কাকা।


‘তোরা একটু বেশি কথা বলিস,’ ভোলা কাকা ধমকে উঠলেন। ‘আমি বরফের দেশে যাব কেন রে?’


‘সে যা-ই বলো কাকা, Europe - America যেসব দেশে শীতের সময় বরফ পড়ে, সে সব দেশে ঠান্ডার ব্যাপারটাই আলাদা,’ আদু বলল। ‘ভেবে দেখো, বাইরে বরফ পড়ছে, আমরা ঘরের ভেতরে আগুনের পাশে বসে আছি। কেমন যেন একটা রোমাঞ্চকর ব্যাপার তাই না কাকা।’


‘আচ্ছা আদু আপু,’ তানজিব প্রশ্ন করল। ‘যখন প্রচুর বরফ পড়ে, তখন রহস্যময় বিভিন্ন ঘটনাও ঘটে, তাই না আপু ?’


‘তা তো ঘটেই,’ আদু জবাব দিল তাদের। ‘আচ্ছা, ঠিক আছে বরফ নিয়েই একটা রহস্য গল্প বলি শোনো তাহলে। দেখি তোমরা রহস্য ভেদ করতে পারো কি না।’


‘এটা কোনো ব্যাপার হল নাকি,’ ভোলা কাকা বললেন। ‘বলো দেখি কী এমন রহস্য!’


‘ Europe এর কোনো এক শহরের ঘটনা,’ আদু বলতে শুরু করল। ‘এক অধ্যাপক খুন হয়েছেন। রাতে তাঁরই এক বন্ধু খবরটা দিয়েছেন থানায়। তিনি আবার নাকি একজন চিকিৎসক। খবর পেয়ে পুলিশ এসেছে তার বাড়িতে। আরও লোকজন নাকি জড়ো হয়েছে।’


‘আপনি কীভাবে জানলেন যে আপনার বন্ধু খুন হয়েছেন?’ এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রশ্ন করলেন চিকিৎসককে।


‘আমি সন্ধ্যার পর চেম্বার থেকে বাসায় ফিরছিলাম,’ চিকিৎসক বলতে শুরু করলেন। ‘এই কদিন যে রকম বরফ পড়ছে আর ঠান্ডা বাড়ছে, তাতে রাতে চেম্বার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আর আমার ফেরার পথেই ওর বাসা। একবার ভাবলাম, ঢুকে একটু কফি খেয়ে যাই। রাস্তার ওপর থেকেই দেখছিলাম যে ওর study রুমে আলো জ্বলছে। তার পর দেয়াল ধরে আসতে আসতে এগিয়ে যেতে লাগলাম। সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছিল জমে থাকা বরফের কারণে।

জানালার কাছে গিয়ে আগে একবার উঁকি দিয়ে দেখতে চাইলাম কী করছে সে। বরফ জমে থাকায় ভেতরটা ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল না। তাই হাতের গ্লাভস দিয়েই বরফ সরিয়ে দিলাম দেয়ার পর দেখলাম যে টেবিলে পড়তো সেই পড়ার টেবিলের ওপর মুখথুবড়ে পড়ে আছে ও।’


‘তারপর কী করলেন?’


‘কী হয়েছে বুঝতে না পেরে, তাড়াতাড়ি সামনে এগিয়ে গিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম। তার study রুমে শুধু টেবিল ল্যাম্পই জ্বলছিল। আর আমি ঘরে গিয়ে অন্য আলো জ্বালালাম। দেখলাম, পিঠে ছুরি মারা হয়েছে। ছুরিটা নেই। ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরছে। তারপরই থানায় আপনাদের ফোন করলাম।’


‘ভালো করেছেন,’ বললেন পুলিশ কর্মকর্তা। ‘তবে আপনাকে সন্দেহের তালিকায় রাখতে হচ্ছে বলে আমি দুঃখিত। আপনাকে একটু বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।’


‘কেন? আমি কি খুন করেছি আর খুন করলে কি আপনাদের খবর দিতাম?’ চিকিৎসক উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করলেন।


‘আমরা কিন্তু একবারও বলিনি যে আপনি খুন করেছেন বা খুনের সঙ্গে জড়িত আছেন,’ পুলিশ কর্মকর্তা শান্তভাবে বললেন ওনাকে।


‘তাহলে আমার উপর আপনাদের সন্দেহ কেন? কেন জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে আমাকে?’


‘কারণ, আপনি মিথ্যা কথা বলেছেন।’


‘রহস্যটা এখানেই যে পুলিশ অফিসার কীভাবে বুঝলেন, চিকিৎসক মিথ্যা বলেছেন,’ আদু তখন হঠাৎ গল্প শেষ করে বলল।


‘হেহ,’ ভোলা মামা একট নরম সুরে বললেন। ‘Bangladesh এ বসে বিদেষের গল্প বললি। আর আমি তো এখানে কোনো রহস্যই পাচ্ছি না। পুলিশের সন্দেহ হয়েছে, ব্যস। অমনি বলে দিল যে চিকিৎসক মিথ্যা বলেছেন।’


‘আমার মনে হয়, আমি রহস্যটা ধরতে পেরেছি,’ তানজিব বলল।


‘তা তো তুই পারবি,’ ভোলা মামা বললেন। ‘যেহেতু তোর বড় বোন বলেছে রহস্য, তাই তুইও বলছিস। নিজে পড়িস ক্লাস seven। তাই ইউনিভার্সিটিতে পড়া বড় বোনকে মনে করিস, সর্বজ্ঞানী।’


‘মোটেও তা নয়,’ তানজিব প্রতিবাদ করল।


‘তাহলে বল দেখি, রহস্যটা কী?’


‘চিকিৎসক প্রথমেই বলেছেন যে রাস্তার ওপর থেকে study রুমে আলো জ্বলতে দেখেছেন,’ তানজিব বলতে লাগল। ‘তারপর আবার বলেছেন যে কাচের জানালার ওপর বরফের আস্তর থাকায় ভেতরটা ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল না। তার মানে কাছে এসেও যেখানে জানালার ভেতরটা ভালোভাবে দেখা যায় না, সেখানে রাস্তা থেকে ঘরের ভেতর বাতি জ্বলতে দেখলেন কীভাবে?’


‘very good ,’ আদু বলল।


‘আরও আছে,’ তানজিব হাত তুলে বলল। ‘চিকিসক পুলিশের কাছে বলেছেন যে study রুমে শুধু টেবিল ল্যাম্পই জ্বলছিল। তার মানে বরফের আস্তর পড়া জানালা দিয়ে বাইরে থেকে আলো যে জ্বলছে, সেটা বোঝা সম্ভব নয়।’


‘একদম পাক্কা গোয়েন্দার মতো ধরে ফেলেছিস,’ আদু বলল।


ভোলা কাকা এতক্ষণ হাঁ করে সব শুনছিলেন। এবার নিচু স্বরে বললেন, ‘এত কিছু চিন্তা করতে পারিনি। নাহ্‌। রহস্যভেদ কাজটা খুব সহজ নয়।’

বিদ্রঃ-  আমাদের লেখা গল্প সায়েরি ভালো লাগলে দয়াকরে আপনার মূল্যবান মতামত জানাবেন এবং অন্যদের পড়ার সাহায্য করবেন ধন্যবাদ।।