গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না -Don't stand around


এই গল্পটি একটু মন দিয়ে পড়বেন মনে হবে নিজের জিবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা 


গল্প   -  “গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না!”

বিষয়  -  খুলনায় আট বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার

গণপরিবহনে যৌন হয়রানির ঘটনায় এমন অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন এক তরুণী।

এই ঘটনাটি প্রায়সই দেখা যায় একদিন বাসে করে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে কে যেন বলে উঠলো “গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না!” পাশে দাঁড়ানো মেয়েটি চিৎকার করে উঠলো। আমি চমকে উঠলাম ভেবেছিলাম কথাটা আমাকে বলেছে। কিন্তু দেখলাম যে মেয়েটি আমার পেছনে দাঁড়ানো বন্ধু জাকিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

জাকির তখন পাল্টা জবাব দিলো, “কোথায় দাঁড়াবো তাহলে? এতো সমস্যা হলে পাবলিক বাসে চড়েন কেন? বাবাকে বলেন আপনারে একটা personal গাড়ি কিনে দিতে”।

তখন আমি তাকিয়ে দেখলাম জাকিরের ডান দিকে খানিকটা সরার মতো জায়গা আছে। তারপরও জাকির ইচ্ছে করেই মেয়েটির গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। আমি চোখের ইশারায় জাকিরকে সরে যেতে বললাম। জাকির তবুও শুনলো না আমার কথা,জাকির আমাকে ঠোঁট নাড়িয়ে যা বললো, তার অর্থ দাঁড়ালো- “তুই শুধু মজা দেখতে থাক!”

তার পর বাস চলতে চলতে একটু দোলা খেলো। আর জাকির ইচ্ছে করে মেয়েটির গায়ের উপর হেলে পড়লো। তখন আমি মেয়েটির চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে কেঁদে ফেলবে। সে মেয়েটা বুঝতে পারছে জাকির ইচ্ছে করে এমন করছে কিন্তু, কিছু বলতে পারছে না। যতটা সম্ভব সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে সে। কিন্তু যাবে কোথায়? ঐপাশের লোকটাও তার দিকে কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

একটু পরে মেয়েটি বাস থেকে নেমে গেলো। আমি তখন তাকিয়ে দেখলাম জাকিরের দিকে তখন সে দাঁত বার করে হাসছে। আমিও সেই হাসিতে যোগ দিলাম। তবে মন থেকে জাকিরের এই ব্যবহারে আমি সমর্থন করতে পারছি না। কিন্তু প্রতিবাদও করলাম না। কারণ জাকির আমার খুব ক্লোজ বন্ধু। তাও আবার অনেক দরকারে জাকিরের কাছ থেকে অনেক সাহায্য পাই। তার বিরুদ্ধে কথা বললে নিজেরই ক্ষতি।

কিন্তু সেদিন আমি ব্যাপারটা অতোটা উপলব্ধি করতে পারিনি- তবে এই ঘটনার প্রতিবাদ না করার কারণে ক্ষতিটা বেশি হবে আমার! যে এমন এক ক্ষতি যা কোনভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়!

তবে হঠাৎ করে মনে হল ১২ বছর আগের সেই ঘটনাটা এই মুহূর্তে কেন মনে পড়ছে জানি না। আসলে বিশেষ কোনো কারণের প্রয়োজন হয় না। আমি মনে মনে প্রায়ই সেই ঘটনায় ফিরে যাই। ইস! যদি সেদিন আমি জাকিরের আচরণের প্রতিবাদ করতাম, মেয়েটিকে সাহায্য করতাম... তাহলে হয়তো...

হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজে যেন সতেজ হলাম। ফিরে এলাম বর্তমানে। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। দেখি বাড়ির দারোয়ান, দাঁত কেলিয়ে হাসছে লোকটা।

“আস্লামুআলাইকুম স্যার। ডাকছিলেন আমারে?”  

আমি বললাম, “হ্যাঁ! নতুন ফ্ল্যাটের এই অবস্থা কেন”
দারোয়ানের মুখ থেকে হাসি মুছে গেলো। “কি হইছে স্যার?”

“আরে... ইলেক্ট্রিক লাইন সব নষ্ট!” বলে বলে আমি বিরক্তি হয়ে পড়েছি। “ফ্যান ঘুরছে না, লাইট জ্বলছে না, ফোনও চার্জ হচ্ছে না!”

“কি বলেন স্যার?” দারোয়ান মনে হলো যেন আকাশ থেকে পড়েছে।

“আগের ভাড়াটিয়া ফ্ল্যাট খালি করার পর সব চেক করে নেন নি?”

“মনে হয় ভালো করে চেক করা হয় নি "সরি স্যার...”

“সরি সরি না বলে সমাধান করেন তাড়াতাড়ি। তার সব মালপত্র নিয়ে ট্রাক অলরেডি রওনা হয়ে গেছে। এদিকে আমার স্ত্রীও প্রেগন্যান্ট। এই গরমে সে এখানে এসে থাকবে কী করেবলেন তো?”

“স্যার একজন মেকানিক ডেকে নিয়ে আসবো?”

“ভালো মেকানিক আছে এদিকে?”

“আছে স্যার। স্মার্ট মেকানিক”। হাসিতে যেন দারোয়ানের সব দাঁত বেরিয়ে পড়েছে। “খুব ভালো মেকানিক স্যার! এক ঘন্টার মধ্যে কারেন্টের সব লাইন ঠিক করে দেবে...”

“ok! তাড়াতাড়ি নিয়ে আসেন তাকে!” 

দারোয়ান চলে গেলো। আমিও তখন দরজা লাগিয়ে দিলাম।

ফ্ল্যাট তখন ফাঁকা মোজা পায়ে দিয়ে হাঁটছি। নতুন ভাড়া নিয়েছি। এলাকাটা বসবাসের জন্য ভালো। হই-হুল্লোড় নাই বললে চলে। গাড়ির শব্দও কম। এক রুম থেকে আরেকরুমে ঘুরছি। বেড রুমে এসে আমি কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলাম!

এই রুমটা আমার চেনা! গত ১০ বছর আগে এই রকম একটা রুমেই ঘটেছিলো ঘটনাটা। এখনও স্পস্ট মনে আছে! মেঝেতে রক্তের বন্যা... এক কর্নারে পড়েছিলো লাশটা...

নাহ! এখান থেকে বললে গল্পটা আপনারা বুঝবেন না। আমি বরং ফিরে যাই ঐ ১২ বছর আগে বাসের ঘটনাটাতে। আসলে ওখান থেকেই তো সবকিছুর শুরু...

ওই সেই বাসে কিগো ভুলে গেলে নাকি...
বাসে মেয়েটির সাথে ঐরকম আচরণের পর জাকির আরও সাহসী হয়ে উঠলো। প্রায়ই সে বাসে উঠে মেয়েদের সাথে বাজে আচরণ করতো। তা আমার সাথে দেখা হলে রসিয়ে রসিয়ে সেসব নিয়ে গল্প করতো। এক সময় বাসের বাইরেও শুরু হলো তার অপকর্ম। রাস্তা ঘাঁটে, শপিং মলে, মেলায়, যেকোনো জায়গায় ভিড়ের মধ্যে সুযোগ পেলেই সে মেয়েদের সাথে খারাপ আচরণ করতো। একি বয়সি মেয়ে, বড়, ছোটো- কেউ বাদ দিত না!

দিনের পর দিন জাকির আরও সাহসী হতে শুরু করলো। আর খুব গর্বের সাথে বন্ধু মহলে এই সব নিয়ে গল্প করতো। একটা সময় পর তার এইসব গল্প আমার শুনতে আর ইচ্ছে হতো না। আমি তাকে এড়াতে শুরু করলাম। তবে যা করা উচিত ছিলো, তা করিনি! এবং যার মাশুল আমাকে দিতে হয়েছে!
বাসের ঘটনার ঠিক ২ বছর পর...

আবার কলিং বেলের আওয়াজ। আমি এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। ব্যাগ কাধে কালি ঝুলি মাখা পোশাক পরে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে একজন।

“স্যার, দারোয়ান বললো আপনার ফ্ল্যাটের কারেন্টের লাইনে নাকি ডিস্টার্ব...”
“ওহ! আপনি সেই স্মার্ট মেকানিক?”
“জি স্যার!”
“আসুন ভেতরে আসুন”।

আমি একপাশে সরে যায়গা করে দিলাম ওনাকে। তখন স্মার্ট মেকানিক ভেতরে ঢুকলো।

“দেখেন তো কি অবস্থা! লাইট ফ্যান কিছুই ঠিক নেই। মোবাইলটা পর্যন্ত চার্জ হচ্ছে না!”
“স্যার, মনে হয় মেইন বোর্ডে সমস্যা । আমি দেখছি স্যার”।

স্মার্ট মেকানিক একটা টুল টেনে এনে মেইন বোর্ড খুলে কাজ করতে থাকলো। সে তার মতো কাজ করুক। চলুন আমরা আবার ১০ বছর আগের ঘটনাটাতে ফিরে যাই...........আমরা!

এক সন্ধ্যায় ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরেছি। হঠাৎ মায়ের উদ্বিগ্ন চেহারা দেখলাম আমি।

মাকে বললাম 
“কি হয়েছে মা?”
“রাখিকে পাচ্ছি না”। মা কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো, “অনেকক্ষণ হয়ে গেলো”।
আমি মাকে সাহস দিয়ে বললাম, “খেলতেছে মনে হয় কোথাও”।
“কার সাথে খেলবে? ওর বন্ধুরা তো সবাই যে যার বাড়ি আছে...”।
“দাঁড়াও আমি দেখছি”।

ও তোমাদের তো বলাই হলো না। রাখি আমার ছোটো বোন। প্রায় ৮ বছর। আমাদের বাড়ির ছাদে, প্রতিবেশিদের ফ্ল্যাটে, বাড়ির আশে পাশে, রাস্তায়- সব খানে খুজলাম রাখিকে। কোথাও পেলাম না। এবার আমিই চিন্তিত হয়ে পড়লাম। বাবাকে ফোন করে জানালাম। বাবা তখন অফিসে জরুরি মিটিং ফেলে পাগল পারা হয়ে চলে এলেন। বাবা বোনকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন।

পুলিশকে খবর দেওয়া হলো। হাসপাতাল গুলোতে লোক পাঠানো হলো। এলাকায় মাইকিং শুরু হলো। কিন্তু তখনও রাখির কোন খোঁজ কেউ দিতে পারলো না। মা তখন আরও কান্নায় ভেঙে পড়লো। বাবার দিকেও তাকানো যাচ্ছে না! আমার বুকের ভেরতটা যেন ফেটে যাচ্ছে, কিন্তু মুখে কিছু বলছি না। প্রায়
রাত ১১টার দিকে পাশের বাসার দারোয়ান আলিম ভাই দৌড়ে এলো আমাদের বাসায়। হাপাচ্ছে খুব। তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে এখুনি কেঁদে ফেলবে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কি হয়েছে আলিম ভাই? রাখির কোন খোঁজ পেলেন?”
“ভাই, তাড়াতাড়ি আসেন আমার সাথে”। বলে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল আলিম ভাই।

তার সাথে আমি পাশের বিল্ডিং এ গেলাম। বুকের ভেতরটা রাখির ভয়ে দুরুদুরু কাঁপছে ভিতরটা। আলিম ভাই আমাকে ৩ তলায় নিয়ে গেল। এই বিল্ডিং এর তিন তলায় একটা ফ্ল্যাট খালি আছে আমি জানি। ভাড়াটিয়া চলে গেছে, এখনও ভাড়া দেয়া হয়নি। ফ্ল্যাটের দরজা খোলা, ভেতরে ঢুকলো আলিম ভাই। তার সাথে সাথে আমিও। বেডরুমে ঢুকলাম। আমি মোবাইলের টর্চের আলোতে জালাতেই দেখলাম- ফ্ল্যাটের মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। এক কনায় পড়ে আছে একটা বাচ্চা মেয়ের নগ্ন লাশ- আমার বোন রাখির! তখন আমার চোখের সামনে পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে এলো, হাঁটু ভাজ হয়ে পড়ে যাচ্ছি........

তখন
“স্যার! মেইন বক্সে প্রবলেম ছিলো। ঠিক করে দিয়েছি”।

স্মার্ট মেকানিকের কথায় আমি আবার বর্তমানে ফিরে এলাম।
“দেখেন তো লাইট-ফ্যানের লাইন সব ঠিক মতো কাজ করছে কি না?”

“স্যার, এইখানেও একটু ঝামেলা আছে মনে হচ্ছে। লাইন ছাড়িয়ে দেন। আমি ঠিক করে দিচ্ছি, সমস্যা নাই”।

আমি আবার ফিরে গেলাম অতীতে...

রাখির লাশ দেখার পর আমার মা-বাবা দুজনেই বেহুশ হয়ে পড়ে গেলো। রাখিকে আর কী দেখবো? তাদের নিয়েই টানাটানি শুরু হয়ে গেলো। পুলিশ এলো। রাখির লাশটা নিয়ে চলে গেলো ময়না তদন্তর জন্য। পরদিন দুপুরে জানা গেলো রাখিকে সারাদিন আটকে রেখে কয়েকবার রেপ করা হয়েছে তাকে। প্রচুর রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে রাখির। ভাবতেই আমার বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। কি পরিমাণ কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে আমার ফুলের মতো নিস্পাপ বোনটিকে! কিন্তু কোন পিশাচ এই কাজ করেছে তা জানার কোন উপায় নেই! কারণ রাখি ঐ ফ্ল্যাটে কখন গেছে তা কেউ দেখেনি!

তখনও জানতাম না কি অপেক্ষা করে আছে আমার জন্য!

পরদিন বিকেলে রাখির এক বন্ধু বললো- রাখিকে আইসক্রিম কিনে দেবে বলে সাথে নিয়ে গিয়েছিলো জাকির

তার নামটা শুনতেই আমার শরীরের সব লোম দাঁড়িয়ে গেলো! হ্যাঁ! জাকির! তার মতো নরপশুর পক্ষেই সম্ভব এমন একটা কাজ করা! ওহ মাই গড! জাকিরে কত ভালোবাসতো রাখি... বাসায় এলেই “জাকির ভাইয়া” বলে দৌড়ে গিয়ে পড়তো তার কোলে...

খবরটা জানাজানি হতেই জাকির পালালো বাসা থেকে। পুলিশ লেগে গেলো চারিদিকে। কিন্তু জাকিরকে কেউ খুঁজে পেলো না। আমার বাবা সর্বোচ্চ চেষ্টা করলো জাকিরকে খুঁজে বের করার। কিন্তু জাকিরকে পাওয়া গেলো না! উধাও হয়ে গেছে যেনো! এরপর কেটে গেছে প্রায় ১০ বছর... এখনো পর্যন্ত জাকিরের সন্ধান আজও পাওয়া যায় নি!

এদিকে আমি নিজের ভেতর গিলটি ফিলিংস নিয়ে ধুকে ধুকে বেচে আছি! ১২ বছর আগের সেদিন বাসের মধ্যে ঐ মেয়েটির “গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না” কথাটা যদি শুনতাম, তার পক্ষ হয়ে যদি প্রতিবাদ করতাম, তাহলে হয়তো জাকির এতদূর এগিয়ে যাওয়ার সাহস পেতো না! আর আমার বোন রাখিও বেচে থাকতো! রাখির মৃত্যুর জন্য আসলে আমিই দায়ি। আমি এবং আমার মতো মেরুদন্ডহীন কাপুরুষরাই দায়ী!

“স্যার, পরিস্কার মতো কিছু আছে?” মেকানিক জিজ্ঞেস করলো। “একটা ন্যাকড়া দেওয়া যাবে? ভিতরে অনেক ধুলা বালি জমে আছে ওই গুলো কারেন্টের লাইন জাম করে দিচ্ছে মনে হয়”।
“না, মোছার কিছুতো কিছু নেই... দাঁড়ান...” বলে পকেটে হাত দিলাম আমি। একটা খবরের কাগজ বের করে আনলাম। “এইটা কাজে লাগাতে পারেন কিনা দেখেন”।

কাগজটা হাতে নিলো মেকানিক। বললো, “কাপড় হলে ভাল হতো আরকি”।
“কাপড় তো নাই”। আমি মাথা নাড়লাম।
“পুরান খবরের কাগজ মনে হইতাছে?”
আমি হাসলাম। “খবরের কাগজ পুরনো, কিন্তু খবরটা আজও নতুনের মতো আমার বুকের ভেতর জ্বলছে!”

মেকানিক খবরের কাগজটা চোখের সামনে আনলো। এনে দেখলো কাগজে একটা ছবি দেখা যাচ্ছে- একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ের লাশের সামনে বসে একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তি পাগলের মতো কাঁদছে। ছবির উপরে খবরের হেডলাইন– “খুলনায় আট বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার”। ছবির নিচে বিস্তারিত রিপোর্ট…

মেকানিক খবরটা পড়ছে। আমি তখন পকেটে হাত দিলাম, হাত দিয়ে বের করে আনলাম লম্বা একটা সাইলেন্সার লাগানো বন্দুক। মেকানিকের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দাড়িয়ে তার মাথার পেছনে বন্দুকে দিয়ে গায়ের খুব জরে আঘাত করলাম আমি। আঘাতটা একদম যায়গামতো লেগেছে। তার সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে ঢলে পড়লো মেকানিক। আমি আসতে আসতে এগিয়ে গেলাম তার দিকে। তার দুই পা ধরে মেকানিকের দেহটা টানতে টানতে নিয়ে গেলাম ঘরের এক কোনায়।

সেই খবরের কাগজটা ভাজ করে আবার আমার কোটের পকেটে রাখলাম আমি। হাতে খুব একটা নেই। যা করার দ্রুত করতে হবে আমাকে। পরবর্তী আধা ঘন্টা ধরে একটা দৃশ্য সাজালাম আমি। সন্তুষ্ট হওয়ার পর থামলাম। এবার মেকানিকের জ্ঞান ফিরানোর পালা। বোতল খুলে হাতে পানি নিয়ে মেকানিকের চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলাম আমি। কয়েক বার চোখ পিটপিট করে তাকালো স্মার্ট মেকানিক , জ্ঞান ফিরে আসছে তার...

চোখ খুলতেই নিজেকে সম্পূর্ণ দিগম্বর অবস্থায় আবিষ্কার করল মেকানিক। তার দুই হাত মোটা দড়ি দিয়ে জানালার সাথে শক্ত করে বাঁধা। পা দুটোও একই রকম দড়ি দিয়ে কষে বাঁধা আছে। চিৎকার করতে গিয়েও নিজেকে থামালো সে। আমার হাতে ধরে থাকা পিস্তলের দিকে নজর পড়েছে তার।

“কেমন লাগছে স্মার্ট মেকানিক? নাকি জাকির নামে ডাকব তোমায়?” আমি বিদ্রূপের সুরে প্রশ্ন করলাম।

স্মার্ট মেকানিকের চোখে মুখে আতংক দেখা দিলো।

মুহূর্তের মধ্যে গত ১০ বছরের দুঃসহ স্মৃতি fast forward হয়ে গেলো আমার চোখের সামনে। পুলিসের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর জাকিরকে আমি কোথায় না খুঁজেছি! অনেক খোজার পর চার মিলিয়ে বের করেছি।
জাকির সেদিন পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। সাথে বেশ কিছু টাকা পয়সা নিয়ে এসেছিলো, তা দিয়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকে অনেক বছর। তারপর ভাগ্যের সন্ধানে কিছুদিন এখানে ওখানে ঘুরে একসময় জামাল উস্তাদের কাছে থাকার জায়গা পায়। তার কাছ থেকেই মেকানিকের কাজ শেখে স্মার্ট মেকানিক। এভাবেই আমার বন্ধু জাকিরে স্মার্ট  মেকানিক হয়ে ওঠা!

জাকিরকে খুঁজে বের করার পর বেশ লম্বা সময় ধরে প্ল্যান সাজালাম আমি। মেকানিকের দোকানের কাছাকাছি ভুল নাম-পরিচয়ে একটা বাসা ভাড়া নিলাম। আমি নিজেই নিজের ঘরের বিদ্যুতের লাইন নষ্ট করলাম, তারপর… সব কিছু একদম প্ল্যানমাফিক হয়েছে!

জাকির একটা ঢোক গিললো। নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়েছে। বললো, “কে আপনি? আমাকে বেধে রেখেছেন কেনো? আমার কাপড় খুলছেন কেনো?”
“সেটা একটু পরেই টের পাবি”। বললাম আমি।
“কি টের পাবো?” জাকির অস্থির কণ্ঠে বললো।
“রিল্যাক্স! এতো তাড়া কিসের? দুই বন্ধু এতদিন পর দেখা হলো, একটু গল্প টল্প করি নাকি…”
“কিসের বন্ধু? আমি আপনাকে চিনি না!”

আমি আসতে কের হাসলাম। মুখ থেকে নকল দাঁড়ি-গোঁফ খুলে নিলাম।
“এবার চিনতে পেরেছিস?”

জাকিরে চোখ বলছে সে আমায় চিনতে পেরেছে। কিন্তু না চেনার ভান করছে - “কে আপনি? আমি আপনাকে চিনি না! আগে কখনো দেখি নাই!”

“এক্ষুনি চিনতে পারবি...” এই কথা বলে পকেট থেকে একটা ছুরি বের করলাম আমি। আঙ্গুল দিয়ে ধার পরীক্ষা করে বললাম, “বাহ! বেশ ধার আছে দেখছি! এক পোঁচেই কেটে ফেলা যাবে”।

প্রচণ্ড আতংক ঘিরে ধরলো জাকিরকে। তোতলাতে শুরু করলো, “আ... আমি কিন্তু চিৎকার করে সবাইরে ডাকবো। আপনি… আপনি মনে করছেন পার পেয়ে যাবেন? এত… এত সহজ না… এই এলাকার সবাইকে আমি চিনি… আমার কিছু হইলে আপনার খবর আছে”।

আমি ছুরি হাতে এগিয়ে গেলাম স্মার্ট মেকানিক ওরফে আমার বন্ধু জাকিরের দিকে। ঠোঁটের কোণে টিটকারির হাসি, “বুঝলাম তোর কিছু হলে মনে হয় এলাকার লোকজন দুনিয়া উলটে ফেলবে। কিন্তু তাতে তোর কি লাভ হবে বল? তোর যে ক্ষতি এখন হতে যাচ্ছে তা কি পূরণ হবে?”

এবার আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলো না জাকির। ভয়ে আতংকে তার চোখ দুটো মনে হচ্ছে কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসবে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলতে থাকলো, “দোস্ত... আমারে মাফ কইরা দে দোস্ত! আমি অনেক বড় পাপ করে ফেলেছি রে... মাফ করে দে আমারে...”

“উপরে গিয়ে ছোট্ট রাখির কাছে মাফ চাস।” বলে জাকিরে মুখের ভেতর একটা রুমাল ঢুকিয়ে দিলাম আমি।

জাকির একটানা কিছু বলে যাচ্ছে। মুখের ভেতর রুমাল থাকায় শুধু গম গম আওয়াজ হচ্ছে, কি বলছে তা বোঝা যাচ্ছে না। এবার আমি পকেট থেকে বের করলাম একটা কালো রঙের গ্লাভাস। বাম হাতে পরে নিলাম।

গ্লাভাস পরা হাতে আমি জাকিরে পুরুষাঙ্গ ধরলাম, অন্য হাতে ছুরি প্রস্তুত। বললো, “জাকির, তুই যা করেছিস তা তোর শাস্তি একটাই- মৃত্যু!”

এই কাজটা করতে মাত্র ৫ সেকেন্ড সময় লাগলো আমার। সমস্ত শক্তি এক করে একটানা চিৎকার করে চললো জাকির। চিৎকারের সময় তার গলায় ও মাথার সবগুলো রগ ফুলে উঠলো। চোখ দুটো মনে হচ্ছে কোটর ছেড়ে ইঞ্চি খানেক বেরিয়ে এসেছে, অসহ্য ব্যাথায় অশ্রু গড়াছে চোখে মুখে। মুখে রুমাল থাকায় তার সেই চিৎকার ঘরের বাইরে কেউ শুনতে পাচ্ছে না। মিনিট খানেক একটানা চিৎকার করে গেল জাকির। তারপর অসহ্য ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে জ্ঞান হারালো জাকির। মাথাটা ঝুলে পড়লো বুকের ওপর।

জানালার গ্রিলে হাত বাঁধা অবস্থায় ঝুলে আছে আরব্য রজনীর চাকরদের মত পুরুষাঙ্গ হারানো এক যুবকের অজ্ঞান দেহ। দুই পা বেয়ে নামা রক্তে ভেসে যাচ্ছে ড্রয়িং রুমের ফ্লোর। ফ্ল্যাটের দরজায় বাইরে থেকে তালা আটকে দিয়ে বেরিয়ে এলাম আমি। গুলি খরচ করার প্রয়োজন হয়নি। রক্তক্ষরণেই মরবে জাকির। যেমন মরেছিল আমার বোন ছোট্ট রাখি !

“গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না!” মেয়েটির সেই চিৎকার আজও আমার কানে বাজে। সেদিন যদি তার হয়ে প্রতিবাদ করলাম, তাহলে হয়তো আজকের দিনটি আমার আর জীবনে কখনো দেখতে হতো না!

বিদ্রঃ- আমাদের লেখা গল্প সায়েরি ভালো লাগলে দয়াকরে আপনার মূল্যবান মতামত জানাবেন এবং অন্যদের পড়ার সাহায্য করবেন ধন্যবাদ।।